কনডম ব্যবহারের সময় অনেক মানুষ কিছু ভুল ধারণা এবং মিথের কারণে অপ্রত্যাশিত সমস্যায় পড়তে পারে। এই মিথগুলির কারণে অনেকেই কনডমের কার্যকারিতা বা নিরাপত্তা নিয়ে সংশয়ে পড়ে। এই গাইডে, আমরা কনডমের উপর প্রচলিত কিছু সাধারণ মিথ এবং ভুল ধারণার আলোচনা করব এবং সঠিক তথ্য প্রদান করব।
১. কনডম ব্যবহারে গর্ভধারণ হয় না — মিথ
একটি সাধারণ মিথ যা প্রচলিত রয়েছে তা হল, "কনডম ব্যবহারে গর্ভধারণ হয় না"। কনডম খুব কার্যকরী হলেও, এটি ১০০% গর্ভধারণ রোধ করে না। কনডম ব্যবহারে নিরাপত্তা হার 98% হলেও, ব্যবহারের সঠিকতা বা ত্রুটির কারণে কিছু সময় অপ্রত্যাশিত গর্ভধারণ হতে পারে।
সঠিক তথ্য:
কনডম ব্যবহারের সঠিক উপায় এবং নিয়ম মেনে চললে এর কার্যকারিতা অনেকটা নিশ্চিত হয়। তবে, ভুলভাবে পরা, ছিঁড়ে যাওয়ার কারণে গর্ভধারণের আশঙ্কা থাকে।
২. কনডম সেক্সের অনুভূতি কমিয়ে দেয় — মিথ
অনেকেই মনে করেন, কনডম ব্যবহার করলে যৌন আনন্দ কমে যায় এবং সেক্সের অনুভূতি নষ্ট হয়। তবে এটি সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। বর্তমানে বাজারে এমন কনডম পাওয়া যায়, যা অত্যন্ত পাতলা এবং যেগুলি উন্নত লুব্রিকেশন প্রদান করে, যা অনুভূতি বৃদ্ধির জন্য সহায়ক।
সঠিক তথ্য:
কনডমের বিভিন্ন ধরনের ভিন্ন ভিন্ন উপকরণ ও ডিজাইন রয়েছে যা সেক্সের অনুভূতি কম না করে বরং বেশ কিছু ক্ষেত্রে আরো বাড়াতে সহায়তা করে। যেমন, এক্সট্রা থিন কনডম বা টেক্সচারড কনডম।
৩. কনডম শুধু পুরুষদের জন্য — মিথ
কনডমের একটি পুরোনো ভুল ধারণা হলো এটি শুধু পুরুষদের জন্য। যদিও এটি পুরুষদের জন্য ব্যবহার করা হয়, তবে বর্তমানে ফিমেল কনডমও বাজারে পাওয়া যায়, যা নারীদের ব্যবহারের জন্য তৈরি।
সঠিক তথ্য:
ফিমেল কনডম মহিলাদের ব্যবহারের জন্য বিশেষভাবে ডিজাইন করা হয়, যা মহিলাদের জন্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সাহায্য করে এবং যৌনমিলনের সময় পুরুষ কনডমের বিকল্প হতে পারে।
৪. কনডম দিয়ে যৌনবাহিত রোগ (STDs) থেকে সুরক্ষা পাওয়া যায় না — মিথ
কিছু মানুষ মনে করেন কনডম ব্যবহার করেও যৌনবাহিত রোগ (STDs) হতে পারে। যদিও কনডম 100% সুরক্ষা দেয় না, তবে এটি হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস (HPV), এইচআইভি এবং অন্যান্য যৌনবাহিত রোগের সংক্রমণ রোধে একটি অত্যন্ত কার্যকরী উপায়।
সঠিক তথ্য:
কনডম সঠিকভাবে পরা হলে, এটি যৌনবাহিত রোগ থেকে সুরক্ষা প্রদান করতে পারে। তবে, কিছু রোগ যেমন স্কিন টু স্কিন কন্টাক্ট-এর মাধ্যমে ছড়ায়, সেগুলির ক্ষেত্রে কনডম কার্যকর না হতে পারে।
৫. কনডম খোলার সময় শকিং — মিথ
অনেকেই মনে করেন, কনডম খুলতে গিয়ে ফাটা বা ক্ষত হওয়া সম্ভাবনা থাকে। সঠিকভাবে খোলার পদ্ধতি জানা না থাকলে এটি হতে পারে। তবে, একটি কনডম সঠিকভাবে খোলার মাধ্যমে তেমন কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়।
সঠিক তথ্য:
কনডম খুলতে গিয়ে আপনি যেন একে ক্ষতিগ্রস্ত না করেন, সে জন্য প্রাথমিকভাবে কনডমের প্যাকেটের মধ্যে যেন কোনো ধারালো বস্তু না থাকে। কনডম খুলতে সময় সঠিক হাতের পদ্ধতি ব্যবহার করা উচিত।
৬. পুরনো কনডম ব্যবহারে কোনো সমস্যা নেই — মিথ
কিছু মানুষ মনে করেন, পুরনো কনডম ব্যবহার করে কোনো সমস্যা হবে না। তবে কনডমের একটি নির্দিষ্ট মেয়াদ থাকে, এবং মেয়াদ শেষ হওয়া কনডমের উপকারিতা কমে যায়।
সঠিক তথ্য:
কনডমের মেয়াদ তিন থেকে পাঁচ বছর পর্যন্ত থাকে, তবে এটি অবশ্যই মেয়াদের মধ্যে ব্যবহার করা উচিত। মেয়াদ উত্তীর্ণ কনডম ব্যবহারে ফেটে যাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায় এবং এটি যথাযথ সুরক্ষা দিতে পারে না।
৭. কনডম ব্যবহারে কেবল গর্ভধারণ থেকে রক্ষা পাওয়া যায় — মিথ
অনেকে মনে করেন কনডম শুধু গর্ভধারণ রোধে সাহায্য করে, তবে এটি যৌনবাহিত রোগ (STDs) এবং অন্যান্য যৌন স্বাস্থ্য সমস্যাও থেকে সুরক্ষা দিতে সহায়তা করে।
সঠিক তথ্য:
কনডম ব্যবহার করা কেবল গর্ভধারণ রোধের জন্যই নয়, বরং এটি এইচআইভি, চিকনগুনিয়া, হেপাটাইটিস বি, গনোরিয়া, সিফিলিস ইত্যাদি রোগ থেকে রক্ষা করতে সহায়তা করে।
৮. কনডম শুধু একবার ব্যবহারযোগ্য — মিথ
কনডম একবার ব্যবহারের পরে পুনরায় ব্যবহার করা যায়, এমন ভুল ধারণা অনেকের মধ্যে রয়েছে। কনডম একবার ব্যবহারের পরে পরিত্যক্ত হতে হয় এবং তা পুনরায় ব্যবহার করা নিরাপদ নয়।
সঠিক তথ্য:
কনডমের একবার ব্যবহারের পর পুনরায় ব্যবহারের মাধ্যমে কন্ডোমে ছিদ্র বা ক্ষতি হতে পারে, যা যৌনস্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ায়। তাই, একবার ব্যবহারের পর নতুন কন্ডোম ব্যবহার করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
উপসংহার:
কনডমের প্রতি কিছু ভুল ধারণা এবং মিথ প্রচলিত থাকলেও, এটি একটি অত্যন্ত কার্যকরী এবং সহজলভ্য মাধ্যম যা গর্ভধারণ ও যৌনবাহিত রোগ থেকে সুরক্ষা দেয়। কনডম ব্যবহার করার আগে উপরের সকল মিথ এবং ভুল ধারণাগুলি সম্পর্কে অবহিত হওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক তথ্যের মাধ্যমে কনডম ব্যবহারে কোনো ত্রুটি বা বিভ্রান্তি না হওয়ার সম্ভাবনা থাকে এবং এটি স্বাস্থ্য সচেতনতা এবং যৌনস্বাস্থ্য রক্ষা করতে সহায়ক হয়।