.png)
১। কী ঘটছে — শরীরগত ব্যাখ্যা
যৌন উত্তেজনা হল মস্তিষ্ক ও নার্ভ-রক্তনালীর সমন্বিত প্রতিক্রিয়া। কোনো উত্তেজক ইন্দ্রিয় (দৃষ্টি, স্পর্শ, মনে কল্পনা) মস্তিষ্কে সংকেত পাঠায় → প্যাভিলিয়নিক নার্ভগুলোতে সংকেত পৌঁছায় → লিঙ্গে রক্তস্বল্পতা ও রক্তসংগ্রহের ফলে ইরেকশন হয় → পর্যাপ্ত উত্তেজনা থাকলে ক্লাইম্যাক্স (অর্গাজম) ও বীর্যপাত ঘটে। স্তন স্পর্শ বা নারীর শরীরের কোনো স্পর্শকাতর অংশ সরাসরি বা মানসিকভাবে বিষয়টিকে তীব্র উত্তেজনায় রূপান্তর করতে পারে—ফলে হঠাৎ বীর্যপাত ঘটতে পারে।
২। সাধারণ কারণসমূহ
- মানসিক উত্থান/কল্পনা: স্তন দেখা বা স্পর্শ মানসিকভাবে টার্গেটেড উত্তেজনা তৈরি করে।
- সংবেদনশীলতা বেশি থাকা: লিঙ্গের মাথা বা পুরো লিঙ্গ অত্যন্ত সংবেদনশীল হলে হালকা উদ্দীপনাতেও বীর্যপাত হতে পারে।
- লাইফস্টাইল ও অভ্যাস: দীর্ঘ সময় অমিল থাকা বা অল্প সময় হস্তমৈথুনে অতিরিক্ত দ্রুত বীর্যপাতের অভ্যাস থাকলে বাস্তবে দ্রুত ক্লাইম্যাক্স হয়।
- শারীরিক কারণ: হরমোনের পরিবর্তন, ডায়াবেটিস, স্নায়ুবিক সমস্যা বা প্রোস্টেটের সমস্যা বীর্যপাতের নিয়ন্ত্রণে প্রভাব ফেলতে পারে।
- ওষুধের প্রভাব: কিছু ওষুধ ইরেকশন/বীর্যপাতের সময়কে বদলে দিতে পারে।
- মানসিক চাপ/অনুভূতি: অপরাধবোধ, লজ্জা, উত্তেজনা বা টেনশনের কারণে শরীর দ্রুত ক্লাইম্যাক্সে পৌঁছাতে পারে।
- পর্ন/হস্তমৈথুন প্যাটার্ন: অনাবিল বা মাত্রাতিরিক্ত পর্ন দেখা ও খুব দ্রুত হস্তমৈথুনের অভ্যাস বাস্তবে সময় নিয়ন্ত্রণে প্রভাব রাখতে পারে।
৩। এটি কি অসাধারণ বা রোগসংকেত?
এক-দুইবার হলে সাধারণত স্বাভাবিক। তবে যদি প্রতিবারই সহবাস বা স্পর্শের সময় দ্রুত বীর্যপাত হয়ে যায় এবং আপনি বা সঙ্গী দু’জনই অসন্তুষ্ট হন—তার মানে হতে পারে প্রিমেচার ইজ্জাক্যুলেশন (Premature Ejaculation) বা অন্য কোনো যৌনস্বাস্থ্য সমস্যা; তখন চিকিৎসা বা থেরাপির প্রয়োজন হতে পারে।
৪। কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করবেন — ব্যবহারিক কৌশল
মনস্তাত্ত্বিক/বিহেভিওরাল কৌশল
-
স্টপ-স্টার্ট পদ্ধতি (Start‑Stop): উত্তেজনা বাড়লে সাময়িকভাবে বন্ধ করে বিশ্রাম নিন, তারপর পুনরায় শুরু করুন—এভাবে ধীরে ধীরে সহনশীলতা বাড়ে।
-
স্কুইজ পদ্ধতি: ক্লাইম্যাক্সের আগে লিঙ্গের মাথা বা গোড়ায় হালকাভাবে চাপ দিলে উত্তেজনা কমে—(সঙ্গীর সম্মতি থাকলে প্রয়োগ).
-
মনোযোগ বিতরণ: দৃশ্য বা স্পর্শে সম্পূর্ণ না হারিয়ে কাজ বা কথা নিয়ে মনটাকে ভিন্ন দিকে ঘোরাতে চেস্টা করুন।
-
কল্পনা নিয়ন্ত্রণ: উত্তেজক কল্পনা সীমিত করুন; ভিডিও/ছবি কম দেখুন যদি তা তাড়াতাড়ি ক্লাইম্যাক্স করায়।
শারীরিক কৌশল
-
কেগেল ব্যায়াম (Pelvic floor exercises): পেশি শক্ত করতে সাহায্য করে; নিয়মিত করলে ক্লাইম্যাক্স নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। পদ্ধতি: প্রস্রাব বন্ধ করার মতো পেশি ধরা, ৫ সেকেন্ড ধরে রেখে ছেড়ে দিন—দিনে ৩ সেট, প্রতিসেটে 10-15 বার।
-
শ্বাস-প্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণ: গভীর ও ধীরে শ্বাস নিন—উত্তেজনা কমাতে সাহায্য করে।
-
অবশ্যই কনডম/বিরোধী উপায়: কনডোম কিছু মানুষের সংবেদনশীলতা কমায়, ফলে বীর্যপাত নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে।
আচরণিক পরিবর্তন
- হস্তমৈথুনের ভাবে পরিবর্তন করুন (ধীরে, কন্ডম ব্যবহার করে, অন্য টেকনিক)।
- পর্নগ্রাফি কমান বা বাদ দিন যদি সেটাই ট্রিগার করে।
- সঙ্গীর সঙ্গে খোলামেলা কথা বলুন—বহুবার সঙ্গীকে সময় নিয়ে অ্যাক্টিভিটি করতে বলা যেতে পারে।
৫। কখন ডাক্তার বা থেরাপিস্টের কাছে যাওয়া উচিত?
- যদি দ্রুত বীর্যপাত নিয়মিতভাবে ঘটে এবং মানসিক কষ্ট দেয়
- যদি বীর্যপাত নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় বা যৌন জীবনে সমস্যা সৃষ্টি করে
- সহবাসে ব্যথা, রক্তপাত, বা অন্য শারীরিক সমস্যা দেখা দিলে
- যদি ওষুধ, ডায়াবেটিস বা অন্য রোগের সন্দেহ থাকে
চিকিৎসকেরা পারেন: আচরণগত থেরাপি, মেডিকেশন (কিছু এসএসআরআই ওষুধ ওষুধি প্রয়োগে ব্যাবহার হয়), সময়কালিক বা সেক্স থেরাপি ইত্যাদি সুপারিশ করতে।
৬। নৈতিকতা, সম্মতি ও নিরাপত্তা
কোনো অবস্থাতেই অন্য কাউকে অনিচ্ছাকৃতভাবে স্পর্শ করা বা অঙ্গভঙ্গি দেখালে সেটা অপরাধ বা অসন্মানজনক হতে পারে। সবসময় স্পষ্ট সম্মতি থাকা প্রয়োজন। অফিসে বা পাবলিক প্লেসে অপ্রস্তুত কাউকে উত্তেজক কনটেন্ট দেখানো থেকে বিরত থাকুন—পেশাগত সীমা বজায় রাখুন।
৭। উপসংহার
স্তন স্পর্শ বা উত্তেজক দৃশ্য দেখে বীর্যপাত হওয়া সাধারণত শরীরের স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া। তবে বারবার এটি হলে বা আপনার মানসিক/যৌন জীবনে বিরূপ প্রভাব ফেললে—নির্দিষ্ট টেকনিক, অনুশীলন এবং প্রয়োজনে চিকিৎসা বা সেক্স থেরাপি সাহায্য করবে। সর্বোপরি স্পষ্ট ও সম্মানজনক যোগাযোগ এবং নিরাপদ অভ্যাসই খাটে।