.png)
হস্তমৈথুন (Masturbation) হলো নিজের যৌন উত্তেজনা মেটাতে নিজেই নিজের যৌনাঙ্গ স্পর্শ বা উদ্দীপিত করে আনন্দ পাওয়া এবং অনেক সময় বীর্যপাত ঘটানো। এটি পুরুষ ও নারীদের উভয়ের ক্ষেত্রেই ঘটে থাকে। এটি একটি স্বাভাবিক এবং নিরাপদ যৌন আচরণ, যেটি পৃথিবীর প্রায় ৮০–৯০ শতাংশ পুরুষ এবং ৫০–৭০ শতাংশ নারী জীবনের কোনো না কোনো সময় করেন।
বাংলাদেশসহ অনেক দেশে এটি নিয়ে কথা বলা নিষিদ্ধ বা লজ্জার মনে করা হয়। অথচ হস্তমৈথুন নিয়ে সচেতনতা ও সঠিক তথ্য জানা প্রয়োজন।
হস্তমৈথুনের উপকারিতা
১. যৌন উত্তেজনা ও মানসিক চাপ কমানো
হস্তমৈথুন করলে মস্তিষ্ক থেকে ডোপামিন, অক্সিটোসিন, ও এন্ডোরফিন নামক “ভালো লাগার হরমোন” নিঃসরণ হয়, যা মানসিক চাপ ও দুশ্চিন্তা কমাতে সাহায্য করে।
২. ঘুম ভালো হয়
অনেক মানুষ হস্তমৈথুনের পর শান্ত বোধ করেন এবং ঘুম সহজে আসে। এটা ঘুমের মানও উন্নত করে।
৩. নিজের শরীর ও পছন্দ বোঝা যায়
হস্তমৈথুনের মাধ্যমে একজন মানুষ বুঝতে পারেন কোন ধরণের স্পর্শ, ছোঁয়া বা কল্পনায় তিনি উত্তেজিত হন। এটি ভবিষ্যতে সঙ্গীর সঙ্গে যৌনজীবনেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।
৪. প্রস্টেট ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে পারে
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত বীর্যপাত (বিশেষ করে মধ্যবয়সীদের ক্ষেত্রে) প্রস্টেট ক্যান্সারের ঝুঁকি কিছুটা কমাতে পারে।
৫. সহবাসের সময় দ্রুত বীর্যপাত (premature ejaculation) নিয়ন্ত্রণে সহায়ক
যারা যৌনমিলনের সময় দ্রুত বীর্যপাত করে ফেলেন, তারা হস্তমৈথুনের মাধ্যমে নিজেদের বেশি সময় ধরে রাখার অনুশীলন করতে পারেন।
ভুল ধারণা যা অনেকেই বিশ্বাস করেন
ভ্রান্ত ধারণা | সত্য |
---|---|
হস্তমৈথুন করলে চোখে কম দেখা যায় | একদম ভুল |
হস্তমৈথুনে শুক্রাণু শেষ হয়ে যায় | শরীর নিয়মিত নতুন শুক্রাণু তৈরি করে |
বিয়ে হলে সমস্যা হবে | বিয়ের সঙ্গে হস্তমৈথুনের কোনো সরাসরি সম্পর্ক নেই |
শরীর দুর্বল হয়ে যায় | মাত্রা অতিরিক্ত হলে ক্লান্তি আসতে পারে, কিন্তু স্বাভাবিক হলে না |
ধর্মীয় দৃষ্টিতে সবসময় হারাম | বিষয়টি বিভিন্ন ধর্মে ভিন্নভাবে দেখা হয়, কিন্তু চিকিৎসা ও মনোবিজ্ঞানে এটি স্বাভাবিক বলে বিবেচিত |
যখন সমস্যা হতে পারে
যদিও হস্তমৈথুন সাধারণত নিরাপদ, তবে নিচের অবস্থা হলে বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে হবে:
- দিনে বারবার হস্তমৈথুন করে দৈনন্দিন কাজে ব্যাঘাত ঘটানো
- হস্তমৈথুন না করলে অস্থির বা অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়া
- পর্নগ্রাফিতে আসক্ত হয়ে পড়া
- বাস্তব যৌনসম্পর্কে আগ্রহ হারিয়ে ফেলা
এসব ক্ষেত্রে একে হস্তমৈথুনের আসক্তি (Masturbation Addiction) বলা যায় এবং মনোরোগ বিশেষজ্ঞ বা যৌন থেরাপিস্টের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
কীভাবে স্বাস্থ্যকরভাবে হস্তমৈথুন করবেন
- নির্জন পরিবেশে, গোপনীয়তা বজায় রেখে
- পর্নগ্রাফির ওপর নির্ভর না করে নিজস্ব কল্পনায়
- পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হাতে ও যন্ত্রপাতি ছাড়া
- নিজেকে দোষী না ভেবে স্বাভাবিক আচরণ হিসেবে মেনে নিয়ে
উপসংহার
হস্তমৈথুন একটি স্বাভাবিক ও নিরাপদ যৌন আচরণ, যার রয়েছে নানা স্বাস্থ্যগত উপকারিতা। এটি দেহ ও মনের জন্য উপকারী হতে পারে, যদি তা অতিরিক্ত না হয় এবং নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থাকে। লজ্জা নয়, সচেতনতা ও সঠিক তথ্যই হতে পারে যৌনস্বাস্থ্যের ভিত্তি।