বিয়ের সম্পর্ক বিশ্বাস, ভালোবাসা ও দায়িত্বের বন্ধনে আবদ্ধ। কিন্তু যখন একজন স্বামী স্ত্রী থাকা সত্ত্বেও অন্য নারীর সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলেন, তখন প্রশ্ন ওঠে – “কেন?”
এটা কি শুধুই চরিত্রগত দুর্বলতা? না কি এর পেছনে আরও গভীর মানসিক, সামাজিক বা দাম্পত্য কারণ আছে?
এই প্রশ্নের উত্তর একক নয় – বিভিন্ন মানুষ, সম্পর্ক ও পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে এটি ভিন্ন হতে পারে। নিচে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
১. দাম্পত্য জীবনে মানসিক সংযোগের ঘাটতি
অনেক সময় স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ভালোবাসা থাকলেও মনের মিল বা মানসিক বোঝাপড়া দুর্বল হয়। স্ত্রী হয়তো স্বামীর কথাবার্তা, চিন্তাভাবনা, অনুভূতি বুঝতে পারছেন না বা ব্যস্ততায় সময় দিতে পারছেন না। ফলে, স্বামী ধীরে ধীরে একাকিত্বে ভোগেন, এবং বাইরে সেই বোঝাপড়ার জায়গা খুঁজতে শুরু করেন।
উদাহরণ:
একজন নারী সহকর্মী যিনি নিয়মিত খোঁজ নেন, বুঝতে চেষ্টা করেন — সেখানে স্বামী সহজেই দুর্বল হয়ে পড়তে পারেন।
২. যৌন অসন্তুষ্টি বা শারীরিক দূরত্ব
যৌন চাহিদা পূরণ না হলে বা স্ত্রীর সঙ্গে যৌন জীবনে অসন্তোষ থাকলে কিছু পুরুষ বাইরে উত্তেজনা বা তৃপ্তির জন্য সম্পর্ক খোঁজেন।
- স্ত্রী যদি যৌনতাকে কেবল দায়িত্ব মনে করেন
- যৌন ইচ্ছার মধ্যে পার্থক্য থাকে
- শারীরিক সম্পর্ক দীর্ঘদিন অনুপস্থিত থাকে
তাহলে স্বামী অন্য নারীকে আকর্ষণীয় ভাবতে পারেন।
❗ এটি যৌনতা নয়, বরং অতৃপ্তি ও ঘনিষ্ঠতার অভাবের বহিঃপ্রকাশ।
৩. বৈবাহিক সম্পর্কের একঘেয়েমি বা বিরক্তি
একই রুটিন, একঘেয়ে জীবন, দাম্পত্যে রোমান্সের অভাব – এগুলো অনেক পুরুষের মনে একটি “বেরিয়ে যাওয়ার রাস্তা” তৈরি করে দেয়। তখন তাঁরা বাইরের নারীর সঙ্গে নতুনত্ব খোঁজেন।
বিশেষ করে:
- বিয়ের অনেক বছর পর
- যখন দাম্পত্য সম্পর্ক শুধুই দায়িত্বের মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে
- দু’জনের মধ্যে আলাদা আলাদা জীবনযাপন শুরু হয়
৪. বাহ্যিক সৌন্দর্য বা মোহে পড়া
কিছু পুরুষ নারীদেহ বা সৌন্দর্যের প্রতি দুর্বল হন। হয়তো কেউ অফিসে, ফেসবুকে বা আশেপাশে এমন কাউকে দেখলেন যিনি চেহারায় আকর্ষণীয়, আধুনিক বা বন্ধুভাবাপন্ন — তখন তারা সেই সৌন্দর্যে মোহিত হয়ে পড়েন।
❗ এটি সাধারণত ক্ষণিকের আকর্ষণ, যা গভীর সম্পর্কের ভিত্তি নয়।
৫. সুযোগ ও গোপনীয়তার সুবিধা
বর্তমান সময়ে মোবাইল, সোশ্যাল মিডিয়া ও বিভিন্ন অ্যাপের কারণে গোপনে বাইরের কারও সঙ্গে যোগাযোগ, বন্ধুত্ব বা প্রেমে জড়ানো খুবই সহজ।
- WhatsApp, Messenger, Instagram
- Office trip, Late night work
- Fake accounts বা নাম গোপন করে সম্পর্ক গড়া
এগুলো অনেককে প্রলুব্ধ করে।
৬. বন্ধুবান্ধব বা সহকর্মীদের প্রভাব
যেসব সমাজ বা বন্ধুপরিমণ্ডলে পরকীয়া বা একাধিক সম্পর্ককে “স্মার্টনেস” বা “অধিকার” হিসেবে দেখা হয়, সেখানে পুরুষরা সহজেই এই পথে আগ্রহী হয়ে ওঠেন।
উদাহরণ:
– “একটা এক্সট্রা রিলেশন থাকলে ক্ষতি কী?”
– “সবাই তো করছে!”
এই ধরনের চিন্তাধারা সমাজে স্বাভাবিক হয়ে গেলে বিবাহপূর্ব বা বহিরাগত সম্পর্ক বেড়ে যায়।
৭. অতীতের অসমাপ্ত সম্পর্ক বা পুরনো প্রেম
অনেক সময় বিয়ের আগের কোনো পুরনো প্রেমিকাকে আবার খুঁজে পাওয়া বা যোগাযোগ হওয়া – এই বিষয়গুলো থেকেও পরকীয়া শুরু হতে পারে।
❗ "বন্ধুত্বের নাম করে" সম্পর্ক শুরু হয়, পরে তা গভীরতা পায়।
৮. নৈতিকতা বা চরিত্রগত দুর্বলতা
সব পুরুষেরই যে এমন সম্পর্ক তৈরির পেছনে মানসিক কষ্ট বা যৌন চাহিদার অভাব থাকে, তা নয়।
কিছু পুরুষের মধ্যে নৈতিকতা বা দায়িত্ববোধের অভাব থাকে – যারা:
- প্রতিশ্রুতি মানতে চান না
- নারীকে “উপভোগের বস্তু” হিসেবে দেখেন
- মনে করেন পুরুষের একাধিক সম্পর্ক রাখা “স্বাভাবিক”
এই ধরনের মানসিকতা সমাজের জন্য ক্ষতিকর।
৯. স্ত্রীর প্রতি শ্রদ্ধা বা গুরুত্বের অভাব
যখন কোনো পুরুষ স্ত্রীর অনুভূতি, মর্যাদা ও সীমারেখার প্রতি উদাসীন হন, তখন তিনি বিবাহের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করতে দ্বিধা বোধ করেন না।
- স্ত্রীকে কম গুরুত্ব দেওয়া
- স্ত্রীর আত্মসম্মান বা আবেগকে অবহেলা করা
- স্ত্রীর প্রতি কর্তৃত্ব দেখিয়ে নিজের ইচ্ছা চাপিয়ে দেওয়া
এসব থেকে একজন পুরুষ বাইরের সম্পর্কে জড়াতে পারেন।
উপসংহার
একজন স্বামী কেন বাইরের নারীর সঙ্গে সম্পর্কে জড়ান – এর পেছনে অনেকগুলো কারণ থাকতে পারে: মানসিক দূরত্ব, যৌন অতৃপ্তি, একঘেয়েমি, গোপন সুযোগ, কিংবা ব্যক্তিত্বগত দুর্বলতা।
তবে এসব কোনোটিই এই আচরণের পক্ষে ন্যায়সঙ্গত কারণ নয়। কারণ, বিয়ে মানেই দায়িত্ব, সম্মান, ও প্রতিশ্রুতি।
❗ “প্রেমে পড়া” হতেই পারে, কিন্তু একজন দায়িত্ববান মানুষ প্রতিটি পদক্ষেপের আগে নিজের স্ত্রী ও পরিবারের কথা ভাবেন।
পরামর্শ: এই পরিস্থিতি এড়াতে কী করা যায়?
- দাম্পত্যে খোলামেলা যোগাযোগ রাখা
- যৌন ও মানসিক ঘনিষ্ঠতা বজায় রাখা
- বাহ্যিক ফাঁদ বা মোহের বিরুদ্ধে নিজের আত্মনিয়ন্ত্রণ গড়ে তোলা
- একসঙ্গে সময় কাটানো, বন্ধুত্ব গড়ে তোলা
- যেকোনো সমস্যায় একে অপরের সঙ্গে কথা বলা