কন্ডোম ব্যবহারে সরকারের ও এনজিওদের ভূমিকা

কন্ডোম ব্যবহারের মাধ্যমে যৌন রোগ (STIs) এবং অপ্রত্যাশিত গর্ভধারণ প্রতিরোধে একটি কার্যকরী উপকরণ হিসেবে কাজ করে। এই কারণে, কন্ডোমের প্রচলন এবং ব্যবহার বৃদ্ধির জন্য সরকার এবং এনজিওরা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। তারা বিভিন্ন উদ্যোগ এবং কর্মসূচির মাধ্যমে জনগণের মধ্যে সুরক্ষিত যৌন স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করে, যেমন কন্ডোম বিতরণ, যৌন শিক্ষা প্রচার, এবং নিরাপদ যৌন সম্পর্কের গুরুত্ব সম্পর্কে জনগণকে অবগত করা।

এই প্রবন্ধে, কন্ডোম ব্যবহারে সরকারের এবং এনজিওদের ভূমিকা বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে।



১. সরকারী উদ্যোগ: যৌনস্বাস্থ্য শিক্ষা এবং কন্ডোমের প্রচলন

বাংলাদেশে সরকার স্বাস্থ্যসেবা এবং জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে কন্ডোম ব্যবহারে গুরুত্ব দিয়ে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা একত্রে যৌনস্বাস্থ্য সম্পর্কিত শিক্ষামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে।


ক) কন্ডোম বিতরণ কর্মসূচি

বাংলাদেশ সরকার পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মাধ্যমে বিভিন্ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র এবং ক্লিনিকে বিনামূল্যে কন্ডোম বিতরণের ব্যবস্থা করেছে। বিশেষ করে, প্রেমিক-প্রেমিকা, বিবাহিত দম্পতি, এবং যৌনকর্মীরা যারা STI (Sexually Transmitted Infection) এবং HIV/AIDS প্রতিরোধে কন্ডোম ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ হতে চান, তাদের জন্য এই কন্ডোম বিতরণের ব্যবস্থা করা হয়েছে।


খ) জাতীয় স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচি

বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর যৌনস্বাস্থ্য এবং কন্ডোম ব্যবহারের বিষয়ে বিভিন্ন সেমিনার, ক্যাম্পেইন এবং জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে। তারা দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে গিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য নানা আয়োজন করছে। যেমন:

  • স্কুল ও কলেজে যৌন শিক্ষা প্রদান
  • গ্রামে গ্রামে স্বাস্থ্য ক্যাম্প আয়োজন
  • যুবক ও যুবতীদের মধ্যে কন্ডোম ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে আলোচনা



২. এনজিওদের উদ্যোগ: যৌনস্বাস্থ্য সচেতনতা এবং কন্ডোম বিতরণ

এনজিওগুলি বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। বিশেষত, তাদের কার্যক্রম যৌনস্বাস্থ্য, জন্মনিয়ন্ত্রণ এবং যৌনবাহিত রোগ (STIs) প্রতিরোধে বেশি মনোযোগী। এনজিওগুলি অনেক ক্ষেত্রে সরকারী উদ্যোগের পরিপূরক হিসেবে কাজ করে থাকে।


ক) Awareness Campaigns (সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন)

এনজিওরা বিভিন্ন চলতি সমাজিক ও সাংস্কৃতিক সমস্যাগুলির ওপর ভিত্তি করে সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন পরিচালনা করে থাকে। এর মধ্যে রয়েছে:

  • STI (Sexually Transmitted Infections)HIV/AIDS সম্পর্কে জনগণকে জানানো।
  • যৌন শিক্ষা এবং কন্ডোম ব্যবহারের সঠিক পদ্ধতি সম্পর্কে জ্ঞান প্রদান।
  • সুরক্ষিত যৌন সম্পর্ক এবং গর্ভধারণ প্রতিরোধ সম্পর্কিত সচেতনতা।


খ) কন্ডোম বিতরণ কার্যক্রম

এনজিওগুলি, যেমন সমাজ উন্নয়ন সংস্থা (BRAC, ActionAid, Population Services International), স্বাস্থ্য কেন্দ্র, ক্লিনিক এবং বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে কন্ডোম বিতরণ কর্মসূচি পরিচালনা করে। তারা বিভিন্ন অঞ্চলে বিনামূল্যে কন্ডোম বিতরণ এবং পরামর্শ প্রদান করে থাকে, বিশেষ করে ঝুঁকিপূর্ণ জনগণ যেমন যৌনকর্মী, যুবক যুবতী, এবং উচ্চ ঝুঁকির মধ্যে থাকা মানুষদের জন্য।


গ) যৌন শিক্ষা এবং ট্রেনিং

এনজিওগুলো প্রায়ই যৌন শিক্ষা প্রদান করার জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রোগ্রাম আয়োজন করে। তারা কিশোর-কিশোরীদের, যুবক যুবতীদের এবং দম্পতিদের কন্ডোম ব্যবহার এবং নিরাপদ যৌন অভ্যাস বিষয়ে সচেতন করে তোলে। এই প্রশিক্ষণগুলি বিশেষত:

  • কিশোর-কিশোরী এবং যুব সম্প্রদায় এর মধ্যে যৌনস্বাস্থ্য সম্পর্কিত সঠিক ধারণা তৈরি করতে সহায়তা করে।
  • মিডিয়াম ও সোশ্যাল মিডিয়া-এর মাধ্যমে যৌন শিক্ষার প্রসার এবং কন্ডোমের গুরুত্ব তুলে ধরা হয়।



৩. যৌনস্বাস্থ্য কর্মসূচি এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা

বাংলাদেশের সরকার এবং এনজিওগুলি যৌনস্বাস্থ্য কর্মসূচি বাস্তবায়নে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার সহযোগিতা গ্রহণ করে। এর মধ্যে রয়েছে:

  • World Health Organization (WHO), UNFPA (United Nations Population Fund), এবং UNAIDS (Joint United Nations Programme on HIV/AIDS) সহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা, যারা যৌনস্বাস্থ্য এবং কন্ডোম ব্যবহারে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে বিভিন্ন প্রোগ্রাম এবং ক্যাম্পেইন চালিয়ে থাকে।

এই সংস্থাগুলি সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য মিডিয়া ক্যাম্পেইন, বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস, জন্মনিয়ন্ত্রণ সপ্তাহ ইত্যাদি উদযাপন করে থাকে।



৪. কন্ডোম ব্যবহারের সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক প্রতিবন্ধকতা

এটা সত্য যে, অনেক দেশে, বিশেষত বাংলাদেশে, কন্ডোম ব্যবহারের প্রতি একটি সাংস্কৃতিক বাধা রয়েছে। অনেকেই কন্ডোম ব্যবহারে অনীহা দেখান, কারণ তারা এটি সম্পর্কে অজানা বা শঙ্কিত। এ কারণে সরকারের এবং এনজিওদের একটি বড় চ্যালেঞ্জ হলো এই সামাজিক বাধাগুলোকে অতিক্রম করা এবং মানুষের মনে কন্ডোমের ব্যবহারকে একটি স্বাভাবিক অভ্যাস হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা।


উপসংহার

সরকার এবং এনজিওদের যৌথ প্রচেষ্টার মাধ্যমে বাংলাদেশে কন্ডোম ব্যবহারের প্রতি সচেতনতা বৃদ্ধি, নিরাপদ যৌন আচরণ গড়ে তোলা এবং স্বাস্থ্যগত সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। যৌনস্বাস্থ্য সম্পর্কিত সচেতনতা বৃদ্ধি, যৌন রোগ প্রতিরোধ এবং অপ্রত্যাশিত গর্ভধারণ রোধে কন্ডোমের ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য। সরকারের কার্যক্রম ও এনজিওদের সহায়তায়, এই সচেতনতা আরোও প্রসারিত হবে এবং সুরক্ষিত যৌন জীবন নিশ্চিত করার জন্য একটি সুষ্ঠু পরিবেশ গড়ে উঠবে।